বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
উজিরপুরে সুদের টাকার বিনিময়ে জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধাকে ঘড় থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উজিরপুরের পৌরসভায় বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুধর্ষ চুরি  বরিশালের বাবুগঞ্জে জমিজমা বিরোধকে কেন্দ্র করে একই পরিবারের ২ জনকে কু*পিয়ে ও পিটিয়ে জ*খম পটুয়াখালীতে কৃষি উন্নয়ন কর্মকর্তা লেবার ফান্ডের কোটি টাকা আত্মসাত  গোপালগঞ্জের পাইককান্দি প্রতিবন্ধী শান্ত, পরিবারের প্রতারণার হাতিয়ার – এ অভিযোগে ভুক্তভোগীর সাভারে শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য প্রস্তুত ১৮৮টি মণ্ডপ মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ৮০ নারী পেলেন হার পাওয়ার প্রকল্পের ল্যাপটপ দুমকিতে ইলিশ সংরক্ষণও অভিযান উপলক্ষে প্রস্তুতি মূলক সভা শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে পটুয়াখালীতে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল’র গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত উজিরপুরে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ-এর অভিযোগে এনজিওর মালিক সজলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
কোতোয়ালী থানা পুলিশের কাণ্ড, টাকা না দেয়ায় অভিযোগকারী হলেন আসামি

কোতোয়ালী থানা পুলিশের কাণ্ড, টাকা না দেয়ায় অভিযোগকারী হলেন আসামি

বাংলাদেশ জনপদ ডেস্কঃ বরিশালে মোটরসাইকেল চোর চক্রের ৫ সদস্যকে আটক করেছিলেন কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। এ নিয়ে নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছেন থানার ওসি (অপারেশন) বিপ্লব কুমার মিস্ত্রিসহ অন্যান্য সদস্যরা। দাবিকৃত ঘুস না দেয়ায় চক্রটিকে ধরতে সহায়তাকারীকে বানিয়েছেন মামলার মূলহোতা আর টাকার বিনিময়ে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে রেখেছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। অন্যদিকে মামলার এক নম্বর আসামীর স্ত্রীর কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে টাকা নেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করলেও ওই পুলিশ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ওসি (অপারেশন) বিপ্লব কুমার মিস্ত্রি।

 

ওই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- আমিনুল ইসলাম হারুনের ছেলে শাওন ইসলাম (২৪), টুনটুন হাওলাদার মুরাদের ছেলে মোঃ রায়হান হাওলাদার (২৩), আবুল কালাম আজাদের ছেলে আরমান হাওলাদার (২৫), আবদুল আজিজ হাওলাদারের ছেলে তাজিম হাওলাদার (২৪), নুরুল আমিনের ছেলে ফজলে রাব্বি (৩৪)।

 

জানা গেছে- সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে মামলার ৩ নম্বর আসামী আরমান হাওলাদারের ইয়ামাহা আর ১৫ মডেলের একটি মোটরসাইকেল বিক্রি করা হবে বলে ৪ নম্বর আসামী তাজিম হাওলাদারের শরনাপন্ন হয়। তাজিম গাড়ির কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে আরমান বলেন সব ঠিকঠাক আছে। আরমানের কথা অনুযায়ী তাজিম সেই গাড়িটি এক নম্বর আসামী শাওন ইসলামের কাছে নিয়ে যায়। তখন শাওন ও ২ নম্বর আসামী রায়হান গাড়িটি কেনার কথা বলে গাড়িটি নিয়ে পালিয়ে যায়। এ নিয়ে ঝগড়া হয় তাজিম ও আরমানের মধ্যে। পরে তাজিম গিয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন। সেই ডায়েরি অনুযায়ী শাওনকে আটক করে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। এরপর বেরিয়ে আসতে শুরু একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তখন থানা গারদে বসেই শাওন চিৎকার দিয়ে বলতে থাকেন সব কিছুর মূলে এসআই রাফসান। রাফসান আমার কাছ থেকে গাড়ি ছিনিয়ে নিয়ে নিজে চালাচ্ছেন।

 

পরেরদিন মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) শাওনের তথ্য মতে মামলার ৫ নম্বর আসামী ফজলে রাব্বিকে আটক করা হয়। রাব্বিকে আটকের পর ৪টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে ৩টি ইয়ামাহা আর-১৫ ও একটি সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটর সাইকেল। উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেলগুলোর মধ্যে একটি ইয়ামাহা আর-১৫ মডেলের মোটরসাইকেল বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাবেক এসআই রাফসানের ছিল বলে জানা গেছে। সে ওই গাড়িটি ফজলে রাব্বির কাছে রাখতেন রাফসান। বর্তমানে এসআই রাফসান র‌্যাবে বদলি হয়েছেন। আর আরমানের কাছ থেকে শাওনের নেয়া গাড়িটি সোনিয়া নামের এক নারীর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। আর এসআই রাফসানের কাছে থাকা গাড়িটি নগরীর নতুন বাজার এলাকার একটি ভাঙারির দোকানের সামনে ভোর পৌণে ৫ টার দিকে রেখে যান মাঙ্কি টুপি পরিহিত এক ব্যক্তি। সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়- ভোর পৌণে ৫ টার দিকে এক ব্যক্তি মাঙ্কি টুপি পড়ে এসে ইয়ামাহা আর-১৫ মডেলের গাড়ি রেখে অন্য একটি মোটরসাইকেলে উঠে চলে যান।

 

এ মামলা থেকে শাওনের স্ত্রী সেতুকে মুক্তি ও শাওনের মামলা হালকা করে দিবে বলে মামুন নামের এক ঠিকাদারের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন থানা ওসি অপারেশন বিপ্লব কুমার মিস্ত্রি। এমনটাই অভিযোগ শাওনের স্ত্রী সেতুর ও তার বড় ভাই আবিরের।

 

ঠিকাদার মামুন বলেন, শাওন আমার কাছে এক লক্ষ টাকা পেত। সেখান থেকে ১০ হাজার টাকা পুলিশকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাকে এই টাকা দিয়েছি সে কথা আমি বলতে পারবো না। তবে ৩৫ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন।

 

এদিকে এসআই রাফসানকে রক্ষার্থে এই ঘটনায় সক্রিয় ভূমিকা নেয় কোতয়ালী মডেল থানার এসআই রাহাতুল। তিনি সংবাদকর্মীদের সামনেই রাফসানকে তার ঘনিষ্ট বন্ধু সম্বোধন করে তাজিমকে গালাগাল ও হুমকি প্রদান করেন। অভিযোগ উঠেছে ওসি (অপারেশন) বিপ্লব কুমার মিস্ত্রিকে ম্যানেজ করে মামলার বাদী হন এসআই রাহাতুল নিজেই।

 

অপরদিকে তাজিমকে মামলা থেকে বাদ দিতে তার বড় ভাই আজিমের কাছে ১ লক্ষ টাকা দাবি করেন থানার এসআই রেজা। আজিম সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাজিমকে মূলহোতা করে এসআই রাহাতুল বাদী হয়ে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠান। আর এসআই রাফসানকে রাখেন ধরা ছোয়ার বাইরে।

 

এসআই রাহাতুল বলেন- প্রাথমিক তদন্তে এসআই রাফসানের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। মামলা চলমান রয়েছে রাফসানের সম্পৃক্ততা পেলে অবশ্যই তিনি আইনের আওতায় আসবে। তাজিমকে গালাগাল করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বলেন- এটা কারো পক্ষ নিয়ে নয়, তাজিম আমার সামনে আমার কলিগকে উদ্দেশ্য করে বাজে মন্তব্য করেছে তাই তাকে শাসিয়েছি।

 

তাজিম বলেন- আমি কয়েকদিন আগে চিল্লা থেকে এসেছি। এরপর আরমান এসে একটি ইয়ামাহা আর-১৫ মডেলের মোটরসাইকেল বিক্রি করবে বলে জানান। আমাকে গাড়ির কাগজপত্র দেখিয়েছে। আমি জানতাম না গাড়ি চোরাই পথে আসা। তাই শাওনের কাছে বিক্রি করতে যাই। শাওন গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় আরমান আমার কাছে গাড়ি দিয়েছে বলে ঝগড়া শুরু করে। পরে আমি গিয়ে থানায় জিডি করি। এরপর শাওন আটক হয়। পরে আমি জানতে পারি বেশ কয়েকটি চোরাই গাড়ি এদের কাছে রয়েছে। সে অনুযায়ী আমি তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করি। উল্টো আমাকেই মূলহোতা বানিয়ে পুলিশ মামলা দেয়। আমার দোষ হলো এই চক্রের সাথে এসআই রাফসানের সংশ্লিষ্টার কথা জানিয়েছি। এ জন্য থানার সামনে বসে এসআই রাফসান ও এসআই রাহাতুল আমাকে গালমন্দ ও নানা হুমকিও দিয়েছে।

 

তাজিমের বড় ভাই আজিম বলেন- তাজিমকে ছেড়ে দেয়ার জন্য এসআই রেজা আমার কাছে ১ লক্ষ টাকা দাবি করেন। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাজিমকে মূলহোতা করে মামলার আসামী করা হয়েছে।

 

আজিম আরও বলেন- টাকা চাওয়ার বিষয়টি ভিডিও ধারন করেন সাংবাদিক রাকিব হোসেন। সে বিষয়টি টের পেয়ে এসআই রেজা তার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভিডিও ডিলেট করে দেয়।

 

এসআই রেজা বলেন- এ ঘটনায় লেনদেনের কোন কথা আমার সাথে হয়নি। অভিযোগ সঠিক নয়। ভিডিও ধারন করায় সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভিডিও ডিলেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- এ রকম কোন ঘটনাই ঘটেনি।

 

শাওনের স্ত্রী সেতু বলেন- আমাকে থানায় ডেকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। আমি ছোট বাচ্চা নিয়ে থানায় ছিলাম। এ সময় আমাকে নানা হুমকি ও ভয়ভিতি দেখিয়েছে পুলিশ। পরে আমাকে ছেড়ে দিতে ও আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা হালকা করে দেয়ার কথা বলে ঠিকাদার মামুনের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে।

 

এসআই রাফসান বলেন- গাড়ির বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমি গাড়ি চালাতেই জানিনা আমি গাড়ি নিয়ে কি করবো। রাব্বির কাছে গাড়ি রেখে রাব্বি ড্রাইভিং করতো আর আপনি পিছনে বসতেন এমন প্রশ্নের উত্তরে রাফসান উত্তেজিত হয়ে বলেন- আপনারা যা পারেন করেন।

 

ওসি (অপারেশন) বিপ্লব কুমার মিস্ত্রি বলেন- এই ঘটনায় কোন টাকার লেনদেন হয়নি। তদন্ত চলছে রাফসান যদি জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শফিকুল ইসলাম রাজিব বলেন- মামলা চলমান রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখোনি কিছু বলা যাচ্ছে না।

 

উল্লেখ্য- ওসি (অপারেশন) বিপ্লব কুমার মিস্ত্রির বক্তব্য গ্রহণকালে প্রতিবেদকের সামনেই ঠিকাদার মামুনের মুঠোফোনে কল করে শাওনের স্ত্রী সেতুর কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন। তবে নিজেকে রক্ষার্থে মামুনের সাথে তার কথোকথনের বিষয়টি ছিল রহস্যজনক। এর কিছু সময় পর মামুন সেতুকে কল করে পুরো টাকা ফেরত দেয়ার কথা জানিয়ে সংবাদ প্রকাশ যেন না হয় সে বিষয়ে অনুরোধ করেন।

সংবাদ টি ভালোলাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Categories