বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
লেখকঃ উইং কমান্ডার (অবঃ) খম মসিউর রহমান লাবলু:: আজ ছিল ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালিত হয়েছে।
এবছর দিনটির তাৎপর্য ছিল ভিন্ন রকমের কারন একই দিনে পালিত হয়েছে পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইনস ডে।
বাংলাদেশে এক সময় বাংলা পঞ্জিকার ফাল্গুন মাস শুরু হত গ্রেগরীয় পঞ্জিকার ১৩ই ফেব্রুয়ারি, পরদিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে।
পর পর দুই দিন আনন্দ উদযাপনের দারুণ উপলক্ষ পেয়ে যেতেন তরুণ-তরুণীরা।
কিন্তু এবার ও একই দিনে হওয়ায় তরুন তরুনীরা ভিন্ন আমেজে সেজে গুঁজে দিনটি উদযাপন করেছে।
যদিও দুটি দিবসের আলাদা একটা বিশেষত্ব আছে।
ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খ্রিস্টান পাদ্রীর স্মরণে এই দিনটি পালিত হয় বলে মনে করা হয়।
১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন।
এই ভালবাসা দিবস আসলে একটি ওয়েস্টার্ন কালচার যা সাধারনত খ্রীষ্টার্ন ধর্মীয় অবলম্বনকারীরা ভালোবাসা দিবস হিসাবে পালন করত।
কিন্ত এ দিনটি টি এখন বিশ্বের সমস্ত দেশের ধর্ম বর্নের মধ্যে দিনটি বিভিন্ন ভাবে পালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও তার ব্যতিক্রম নয়, বরং ইতালির রোম নগরীর চেয়ে আমার মনে হয় অনারম্ রাজধানী ঢাকায় অনারম্ভর বা জাকজমকপূর্ন ও বানিজ্যিক ভাবে উৎযাপিত হয়েছে।
এর সাথে বাড়তি আকর্ষণ হিসাবে যোগ হয়েছে পহেলা ফাল্গুন কারন এবারও বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস এসেছে জোড় বেঁধে।
গতকাল নানা রঙের আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালীরা বরণ করে নিয়েছে ঋতুরাজ বসন্তকে।
তরুণ-তরুণীরা নিজেদেরকে সাজিয়েছে হলুদ, কমলা, বাসন্তী রঙের পোশাকে।
এমনকি অফিস পাড়াতে ও কর্মজীবি মহিলারা বাসন্তী ও লাল শাড়ী পড়ে কানে ফুল গুঁজে অফিসে এসেছিলেন।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রাচীন কাল থেকেই বাঙালি বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে এবং
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালনের রীতি চলে আসছে।
বাংলা ১৪০১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব উদযাপন করার রীতি চালু হয়।
এর মধ্যেই অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব। ফাল্গুনের প্রথম দিনকে বাংলাদেশে পহেলা ফাল্গুন ও বসন্ত বরণ উৎসব হিসেবে উদযাপন করা হয় যা ১৯৯১ সালে সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ কর্তৃক আয়োজন করা হয়।
শীতের রুক্ষতাকে পিছনে ফেলে প্রকৃতিকে আবার নতুন রূপে সাজিয়ে তোলার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে বসন্ত।
গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়, ফুলের মুকুল আসে ও পাখি গান গায়। আর বাতাসে ভাসে মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ।
প্রজাপতিরা রঙিন ডানা মেলে জানায় ঋতুরাজের আগমনী বার্তা।
বসন্ত শুধু প্রকৃতিতেই নয় মানুষের মনেও জাগায় প্রাণের ছোঁয়া।
তাই বসন্তের প্রথম দিনটিকে উদযাপন করতে সবাই মেতে ওঠে উৎসবে।
নিজেকে সাজিয়ে তোলে বসন্তের রঙে। ফাল্গুন নামটি এসেছে মূলত ফাল্গুনী নামের নক্ষত্র থেকে।
বসন্তের এই দিনে এখন গ্রামের বনে জংগলে বা মেঠো পথে শোনা যায় কোকিলের কুহু ডাক।
ব্যস্ততম শহরের কোলাহল মুক্ত পার্কগুলোতে ও কান পাতলে হয়তো কোকিলের কুহু ডাক শোনা যেতে পারে।
তবে শহরের ফুলের দোকানসহ বিপণিবিতানগুলোতে যে ভাবে সাজ সাজ রব ও সমস্ত ঢাকা শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও যে ভাবে ছেলে মেয়েরা বানিজ্যিক ভাবে গতকাল চড়া দামে ফুলের পশড়া সাজিয়ে বসেছিল তা সত্যিই চোখে পড়ার মত ছিল।
যেহেতু গতকাল ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন ছিল, এ বসন্তবরণে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই ছিল নানা আয়োজন।
গতকাল দিনভর শাহবাগের ফুলের দোকানগুলো ভিড় লেগেই ছিল।
বর্ণিল পোশাকে ও সাজে বসন্তকে আমন্ত্রণ জানায় কিশোর-কিশোরী আর নানা বয়সের মানুষ।
তাছাড়া গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বটতলা হয়েছিল যেন এক টুকরো বাংলাদেশ।
পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, টিএসসি, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ছিল বর্ণিল আয়োজন।
এসব অনুষ্ঠানে নারীদের খোঁপায় ও হাতে রঙিন ফুল আর নানা রঙে রাঙানো শাড়ি এবং ছেলেদের গায়ে ছিল বসন্তের পাঞ্জাবি।
এটি শুধু ঢাকা শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সারা দেশেই জেলা শহর সহ উপজেলা ও প্রান্তিক লেভেলের স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরাও রঙিন সাজে বসন্তের পোষাকে দিনভর আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছিল।
এমনকি পড়ন্ত বিকালে বইমেলায় রঙিন সাজে বসন্তের পোষাকে ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
ভালোবাসা হলো একটি অদৃশ্য বন্ধুত্ব, একটি অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক যেখানে দুইজন মানুষ একে অপরকে সম্মান করে, আদর করে, সমর্থন করে, এবং পরামর্শ দেয়, সে দিনটি উদযাপনে পার্ক, রেস্তোরাঁ, বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি ভালোবাসার মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
তবে দেশের দ্রব্যমূল্যের নাভিশ্বাস ও উর্দ্বগতিতে মানুষের মধ্যে যখন হাহাকার সরকার যেখানে এটি কমানোর জন্য ও সাধারন মানুষের নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য তাগিদ ও চেষ্ঠা করে যাচ্ছে, সেখানে মানুষের অতিরিক্ত বাণিজ্যিকীকরণ এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির এসব দিবস আমাদের দেশের সংস্কৃতির সাথে যায় না।
ফলে ভালোবাসা দিবস সমালোচিত হয়। কারন ভালোবাসা প্রকাশের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন নেই।
যাইহোক, ভালোবাসা দিবস ভালোবাসা ও স্নেহের প্রকাশের একটি সুন্দর মাধ্যম।
দিনটি আমাদের সকলকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ভালোবাসাই জীবনের সারবস্তু।
তাই নিরন্তর শুভেচ্ছা ও সবার জন্য রইল আমার ব্যক্তিগত ভালবাসা!
লেখকঃ উইং কমান্ডার (অবঃ) খম মসিউর রহমান লাবলু, (সাবেক বিমান বাহিনী কর্মকর্তা)
ফোনঃ 01769998536
Leave a Reply